পাইলস হচ্ছে পায়ুপথের ভিতরে বা বাইরে ফুলে যাওয়া রক্তনালী যা থেকে রক্তপাত হয়। সাধারণত পায়ুপথের চারপাশে রক্তনালী থাকে ।কিন্তু তাতে কোনো সমস্যা হয় না। সমস্যা তখনই হয় যখন কোনো কারণে এগুলো ফুলে যায়। তখন এগুলো উপসর্গ তৈরী করে।ইংরেজিতে পাইলসকে হেমোরয়েড(Haemorrhoid) বলে।
আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো পাইলস কী?পাইলসের কারণ,পাইলসের লক্ষণ,পাইলসের ব্যথা কমানোর উপায়, পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা, পাইলস হলে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে? পাইলসের অপারেশন ইত্যাদি সম্পর্কে ।
পাইলস কী?
আমাদের পায়ুর চারপাশে নরম স্পঞ্জের মতো টিস্যু থাকে যেগুলো কিছু রক্তনালীর মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ পায়। এই স্পঞ্জি টিস্যু গুলোকে এনাল কুশন বলে। এই কুশনগুলো আমাদের পায়ু বন্ধ করতে সাহায্য করে। কিন্তু কিছু কিছু কারণে এগুলো ফুলে যায় এবং পাইলস তৈরী করে।
পাইলস দেখতে ছোট গোলাকার ফোলার মতো। রোগীরা এই ফোলা অনুভব করতে পারে অথবা মনে হয় যেন পায়খানার রাস্তা থেকে কিছু ঝুলে আছে।
পাইলসের কারণ:
পায়ুপথের রক্তনালী ফুলে গেলে পাইলস হয়। পাইলসের কারণ হতে পারে:
১. কোষ্ঠকাঠিন্য:
যারা দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠি নেব কেন তাদের পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা রোগীরা যখন পায়খানায় যায় তখন পায়খানা করার জন্য অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করতে হয় যার কারণে পাইলস হয়।
২. দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া:
যারা অনেক সময় ধরে বা দীর্ঘদিন ধরে ডায়রিয়া রোগে ভোগে তাদেরও পাইলস সবার সম্ভাবনা থাকে। ঠিক যেমন কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের ক্ষেত্রে পায়খানায় গিয়ে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করতে হয়, একই কারণে ডায়রিয়া রোগীদেরও পাইলস হতে পারে।
৩. বৃদ্ধ বয়স:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাইলস সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। কারণ বয়স বাড়ার সাথে সাথে পায়ের পথের মাংসপেশি নরম বা দুর্বল হতে থাকে।
৪. দীর্ঘমেয়াদি কাশি:
যাদের একটানা অনেক দিন ধরে কাশি আছে, তাদের ক্ষেত্রেও পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. ভারী বস্তু উত্তোলন:
ভারী বস্তু উত্তোলনের কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের ক্ষেত্রেও পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পাইলসের লক্ষণ:
পাইলস সবার ক্ষেত্রে উপসর্গ বা লক্ষণ তৈরি করে না। পাইলসের লক্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়াঃ
পাইলসের কারণে পায়খানার সাথে রক্ত যেতে পারে ।এই রক্তের রং উজ্জ্বল অর্থাৎ তাজা হবে সাধারণত পায়খানা করার পরে কমোড বা প্যানের সাথে তাজা রক্ত লেগে থাকতে দেখা যায়।
কিন্তু যদি গাঢ় রঙের বা কালো আলকাতরার মত রক্ত দেখা যায় তবে সেটি কোনভাবেই পাইলসের কারণে নয়। এমনটি হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
২. পায়ুপথের আশেপাশে ফোলা বা পায়ুপথের মুখের অংশ বেরিয়ে আসা:
পাইলস হলে সাধারণত পায়ুপথের এনাল কুশনগুলো বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে। কারো কারো ক্ষেত্রে এগুলো নিজে নিজে ভিতরে চলে যায় এবং কারো কারো ক্ষেত্রে আঙ্গুল দিয়ে এগুলো ভিতরে ঢুকানো যায়। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে পাইলস এতটাই গুরুতর হয় যে এগুলোকে আর ভিতরে প্রবেশ করানো সম্ভব হয় না।
৩. পায়ুপথে ব্যথা হওয়া:
পাইলস হলে সাধারণত তীব্র ব্যথা হয় না কিন্তু যদি পাইলসের ফোলাগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে এবং ভিতরে প্রবেশ করানো সম্ভব না হয় তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত
৪. মলত্যাগের পর অস্বস্তি:
কারো কারো ক্ষেত্রে মলত্যাগের পর এমন মনে হতে পারে যেন পেট পরিষ্কার হয়নি।
পাইলসের ব্যথা কমানোর উপায়ঃ
পাইলসের ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন। তবে এত কাজ না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।
পাইলসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়:
- একটি প্লাস্টিকের গামলায় কিছু পরিমাণ কুসুম গরম পানি নিন এবং তাতে পায়ুপথ ভিজিয়ে বসে থাকুন দিনে কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার এভাবে বসে থাকুন।
- পায়ুপথ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন মলত্যাগের পর জোরে টিস্যু পেপার দিয়ে ঘষবেন না।
পাইলস থেকে মুক্তি পান অপারেশন ছাড়া :
পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা ঃ
ঘরোয়া উপায়ে পাইলসের চিকিৎসা করতে হলে পাইলসের কারণগুলো থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তবেই পাইলস থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে হলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আস যুক্ত খাবার খেতে হবে। শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে আর থাকে। খাবারে শাকসবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে।বেশি করে পানি পান করতে হবে। দিনে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করতে হবে।কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে ইসবগুলের ভুষি খাওয়া যেতে পারে
- মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে পাইলস হতে পারে তাই মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ পরিহার করতে হবে।
- ওজন কমাতে হবে।আপনার ওজন যদি বেশি হয় তাহলে অবশ্যই ওজন কমাতে হবে।
- নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা।পাইলস থেকে রক্ষা করতে হবে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে হবে ।আর স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা অপরিহার্য।
পাইলস হলে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?
ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসায় অনেকের পাইলস ছেরে যায় কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে এটি খারাপ অবস্থায় চলে যেতে পারে এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো দেখা গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে:
- ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসার সাত দিনের মধ্যেও পাইলস থেকে মুক্তি না পাওয়া
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া বন্ধ না হলে
- পাইলসের ব্যথা অতিরিক্ত ভাবে বেড়ে গেলে
- বারবার পাইলসের সমস্যা হলে
- পাইলস থেকে পুঁজ বা পানি পড়লে।
- জ্বর বা কাপুনী হলে
- বয়স অনেক বেশি হলে।
পাইলসের অপারেশন:
ঘরোয়া উপদেশ এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো ঔষধ খাওয়ার পরেও যদি পাইলসের সমস্যা ভালো না হয় তবে চিকিৎসক আপনাকে অপারেশনের উপদেশ দিবেন। পাইলসের জন্য নিম্নোক্ত অপারেশন গুলো করা হয়।
- হেমোরয়েডেকটমি
- স্ট্যাপলড হেমোরয়েডোপেক্সি
- হেমোরয়েডাল আর্টারি লাইগেশন
মানুষ আরো যে সকল বিষয়ে সার্চ করে ঃ
পাইলস এর প্রাথমিক লক্ষণঃ
পাইলস এর প্রাথমিক লক্ষণ হলো পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া। অন্যান্য লক্ষনগুলো উপরে আলচনা করা হয়েছে।
পাইলস এর প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
পাইলসের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্যে যা করতে হবেঃ
- কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে হবে।
- মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।
- ওজন কমাতে হবে।
- নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা।
পাইলস থেকে কি ক্যান্সার হয়?
না, পাইলস থেকে সাধারণত ক্যান্সার হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।
পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধঃ
পাইলসের রোগীদের মাংস খাওয়া উচিত নয়। কারণ মাংস পাইলসের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন