নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের সংক্রমন জনিত একটি রোগ।এটি সাধারণত ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি হতে দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রেও নিউমোনিয়া প্রায় কমবেশি হয়ে থাকে। প্রতিবছর প্রায় অনেক অনেক শিশু নির্মমনে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
আজকের ব্লগে আমরা নিউমোনিয়া কি, নিউমোনিয়ার কারণ, নিউমোনিয়ার প্রকার, লক্ষণ, কিভাবে নিউমোনিয়া নির্ণয় করা হয়, নিউমোনিয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি এবং প্রতিরোধের জন্য করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করব।
নিউমোনিয়া কি ?(Pneumonia meaning in bengali)
নিউমোনিয়া একটি ইংরেজি শব্দ। ফুসফুসে জীবানুর সংক্রমণকে নিউমোনিয়া বলা হয়।
আমাদের ফুসফুসে অনেক অ্যালভিওলাই বা বায়ুথলি রয়েছে। জীবাণুর সংক্রমণ হলে এই বায়ু থলিগুলোতে প্রদাহের (inflammation)সৃষ্টি হয়।
বায়ুথলি গুলোতে প্রদাহ হওয়ার ফলে সেখানে পুরুষ বা তরল পদার্থ জমা হয়। যার ফলে শ্বাস প্রশ্বাস কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে এবং নানারকম অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়। একেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে নিউমোনিয়া বলা হয়।
সাধারণত নিউমোনিয়া কোন দীর্ঘমেয়াদী বা ক্রনিক ডিজিজ নয়। নিউমোনিয়ার আক্রমণ হঠাৎ করে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তার তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
নিউমোনিয়া হওয়ার কারণ কি?
ফুসফুসে বিভিন্ন প্রকারের জীবাণুর আক্রমণের ফলে নিউমোনিয়া হয়। সকল জীবনের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস ইত্যাদি।
তবে ব্যাকটেরিয়া দিয়েই সবচেয়ে বেশি নিউমোনিয়া সংঘটিত হয়। ব্যাকটেরিয়া গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমন বা সবচেয়ে বেশি যে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে নিউমোনিয়া হয় তার নাম হচ্ছে Streptococcus pneumoniae.
এছাড়া অন্যান্য যে সকল ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস, দিয়ে নিউমোনিয়া হয় তার কিছু উদাহরণ নিচে দেওয়া হল:
- Haemophilus influenzae
- Mycoplasma pneumoniae
- Legionella pneumophilia
- Respiratory syncytial virus
- SARS-COV-2 (coronavirus)
- Cryptococcus species
- Histoplasma species
নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণঃ
নিউমোনিয়া রোগের কারণের উপর নির্ভর করে এর লক্ষণ বিভিন্ন রকম হতে পারে এবং লক্ষণ গুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে। তবে সাধারণ ভাবে আমরা যেসকল লক্ষণ বেশি প্রত্যক্ষ করি সেগুলো নিচে দেয়া হলো:
জ্বর: নিউমোনিয়ার প্রথম লক্ষণ হিসেবে আমরা জ্বরের কথা বলেতে পারি। নিউমোনিয়া হলে সাধারণত উচ্চমাত্রায় জ্বর হয়। সেক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা ১০৩°F থেকে ১০৫°F পর্যন্ত হতে পারে।
শ্বাসকষ্ট: নিউমোনিয়ার গুরুত্তপূর্ণ একটি লক্ষণ বা উপসর্গ হলো শ্বাসকষ্ট । রোগীর যখন শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হয়ে যাবে তখনই আমরা ধরে নেব যে তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
কাশি: নিউমোনিয়ার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো কাশি। ফুসফুসের প্রদাহের কারণে নিউমোনিয়ায় কাশি হয়। কাশির সাথে সাধারণত শ্লেষ্মা যায়। নিউমোনিয়ার ধরন অনুযায়ী শ্লেষ্মার রং বিভিন্ন রকম হতে পারে।
বুকে ব্যাথা: বুকে ব্যাথা নিউমোনিয়ার আরো একটি গুরুত্বপূর্ন লক্ষণ। রোগীর বুকে ব্যথা হলে বসে না থেকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ক্লান্তি: নিউমোনিয়া হলে অন্যান্য রোগের মতো রোগী ক্লান্তি বা অবসাদে ভোগে।
এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন:
- দ্রুত হৃদস্পন্দন
- ঘাম হওয়া বা ঠান্ডা লাগা
- ক্ষুধামান্দ্য
- নীলাভ ত্বক, ঠোঁট বা নখ
- বিভ্রান্তি বা পরিবর্তিত মানসিক অবস্থা
বড়দের নিউমোনিয়ার লক্ষণ:
উপরের আলোচিত লক্ষণ গুলি সাধরনত বড়দের নিউমোনিয়ার লক্ষণ।
ছোটদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ:
ছোটদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ গুলো হলো:
- পূর্বের তুলনায় অধিক কান্না করা ইত্যাদি
৬৫ বছরের অধিক বয়স্কদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ:
নিউমোনিয়া প্রতিরোধ:
নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করার জন্য ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা গ্রহন করা যায়।
নিউমোনিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ টিকা বা ভ্যাক্সিন (Vaccine) হলো:
নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন।
অন্যান্য প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা:
ভ্যাক্সিন নেয়ার পাশাপাশি নিচের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিতে হবে:
ধূমপান ত্যাগ করা
খাবার আগে এবং টয়লেট থেকে আসার পরে হাত ধোয়া
ঠান্ডা বা কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রাখা
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া
নিয়মিত ব্যায়াম করা
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
আপনি যদি শ্বাসকষ্ট, ক্রমাগত কাশি (বিশেষ করে যদি আপনার কাশি থাকে), ক্রমাগত উচ্চ তাপমাত্রা (39°C বা 102°F), বা বুকে ব্যথা সহ নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলি লক্ষ্য করেন তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। নিচে উল্লেখিত ব্যাক্তিরা উচ্চ ঝুকিতে আছেঃ
- ৬৫ বছরের অধিক বয়স
- ২ বছরের কম বয়সী শিশু
- কেমোথেরাপি বা ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ গ্রহণকারী রোগীরা।
- পূর্ববর্তী অসুস্থতা বা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষ।
নিউমোনিয়া হলে করণীয়ঃ
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা:
নিউমোনিয়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনোরূপ অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নঃ
নিউমোনিয়া কি ছোঁয়াচে?
আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে নিউমোনিয়া হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে রোগীর কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে রোগজীবাণু ছড়াতে পারে। একে বলা হয় "ড্রপ্লেট ইনফেকশন"।
নিউমোনিয়া রোগ কিভাবে ছড়ায়?
নিউমোনিয়া ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা হয় এবং সহজেই বাতাসের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের মাঝে ছড়াতে পারে। এর মানে হল যে কোনও সংক্রমিত ব্যক্তি যখন কাশি বা হাঁচি দেয় তখন সুস্থ লোকেরাও বায়ুবাহিত ফোঁটা বা ড্রপ্লেট শ্বাসের মাধ্যমে নিতে পারে। দূষিত বায়ুবাহিত ফোঁটা শ্বাস নিলশে সুস্থ মানুষও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
নিউমোনিয়া কি ধরনের রোগ?
নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের সংক্রমন জনিত একটি রোগ।এটি সাধারণত ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি হতে দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রেও নিউমোনিয়া প্রায় কমবেশি হয়ে থাকে। প্রতিবছর প্রায় অনেক অনেক শিশু নির্মমনে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।
নিউমোনিয়া ভালো হতে কত সময় লাগে?
একজন রোগী কত দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন তা নির্ভর করে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। চিকিৎসা শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিক অবস্থার উন্নতি হয়। রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়ে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন