কোষ্ঠকাঠিন্যে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম জানুন। ভুল পদ্ধতিতে খাওয়া বন্ধ করুন।

আমাদের অনেকের মাঝেই কোষ্ঠকাঠিন্য একটি পরিচিত সমস্যা।আর এই কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করার জন্য অনেকেই ইসবগুলের ভুসি খেয়ে থাকেন।

তাছাড়া অনেক লোকেরা পাইলস বা অর্শ্ব রোগ কিংবা এনাল ফিসার বা গেজ রোগে ভুগে থাকেন , যার চিকিৎসার একটি মাধ্যম হচ্ছে এই ইসবগুলের ভুসি।

কিন্তু আমরা অনেকই ইসবগুলের ভুসি সঠিক ভাবে খাওয়ার নিয়ম জানি না, যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা তৈরী হয়।


আজকের পোস্ট আমরা জানবো ইসবগুলের ভুসি কখন খাবেন, কখন খাবেন না, ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম, ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা,ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অপকারিতা।


কোষ্ঠকাঠিন্যে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম জানুন। ভুল পদ্ধতিতে খাওয়া বন্ধ করুন।
ইসবগুলের ভুসি 


কোষ্ঠকাঠিন্যে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার নিয়ম:

সাধারণত আমরা ইসবগুলের ভুসি প্রায় দীর্ঘ সময় পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর খাই। অনেকে আবার রাতে ইসবগুলের ভুসি ভিজিয়ে রেখে সকালে খান। কিন্তু এটি একটি ভুল পদ্ধতি।

সঠিক পদ্ধতি হলো ইসবগুলের ভুসি পানিতে ভিজিয়ে সাথে সাথেই খেয়ে নেয়া। 

বাজারে খোলা অথবা প্যাকেটজাত ইসবগুলের ভুসি কিনতে পাওয়া যায়। প্যাকেটজাত ইসবগুলের ভুসি প্যাকেটের গায়ে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

ইসবগুলের ভুসির সাথে পরিমাণমতো পানি নিতে হবে যেন মিশ্রণটি হালকা ঘোলা দেখায় ।অতিরিক্ত ঘোলা বা ঘন করে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। পানির সাথে ভালোভাবে ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে তারপর খেয়ে ফেলুন।

সাধারণত অতিরিক্ত চিনি মেশানোর প্রয়োজন হয় না। তবে আপনি চাইলে প্রয়োজনমতো চিনি মেশাতে পারেন।


আরো পড়ুনঃ  Zinc Rich Foods: জিংক সমৃদ্ধ ১১টি খাবার ।জিংক এর কাজ ,অভাবজনিত রোগ, লক্ষণ এবং জিংকের উপকারিতা


ইসবগুলের ভুসি কখন খাবেন?

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার জন্য সাধারণত দিনে দুইবার ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। দুই বেলা খাওয়ার পরে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরে দিনে কমপক্ষে ১.৫- ২ লিটার পানি পান করতে হবে। ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরে পর্যাপ্ত পানি না খেলে তা অন্ত্রের মুখে আটকে যেতে পারে এবং খাবার চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে । এতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য আরো খারাপের দিকে যায়।


ইসবগুলের ভুসি কখন খাওয়া যাবে না?

  1. যদি কোনো কারণে পেটে ব্যথা থাকে বা বমি বমি ভাব থাকে তখন ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে না।
  2. ঘুমানোর আগে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া ঠিক নয়। এতে করে বৃহদান্ত্রের মুখে ইসবগুলের ভুসি জমে ''অবস্ট্রাকশন'' করতে পারে। এটি একটি জরুরী অবস্থা  । এমনটি হলে প্রচুর পেতে ব্যথা থাকে, পায়খানা হয় না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে জ্বর থাকতে পারে। এমনটি মনে হলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালের যাওয়া উচিত। 
  3. পূর্বে কখনো অবস্ট্রাকশন হওয়ার ইতিহাস থাকলে  ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে না।
  4. আগে কখনো ইসবগুলের ভুসি খেয়েছেন এবং শরীরে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এমন হয়ে থাকলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে না।
  5. দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকার কারণে যদি পায়খানা জমে পায়ুপথের মুখ আটকে যায়, তবে সেক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে না।
  6. যদি পায়ুপথ দিয়ে রক্ত যাওয়ার কোনো রোগ থাকে কিন্তু সেটার কারণ অজানা থাকে তাহলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে না।
  7. বৃহদান্ত্রের মাংসপেশির দুর্বলতাজনিত কোনো রোগ থাকলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে না


সর্বোপরি, একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া ঠিক নয় । এতে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একটানা ৩দিন ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার পরেও যদি উন্নতি না হয় , তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ Acne : ব্রণ দূর করার  ১২ টি ঘরোয়া উপায়


ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা:

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

১.কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ইসবগুলের ভুসি অনেক ভালো কাজ করে। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘরোয়া উপায় হিসেবে এটিকে অনেকে বেছে নেন। অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ডাক্তার দেখানোর পূর্বে ইসবগুলের ভুসি খান।


২. হজমে সহায়তা করে:

ইসবগুলের ভুসি খাবার হজমে সহায়তা করে। তাই আপনার যদি খাবার হজমের সমস্যা থাকে তবে আপনি ইসবগুলের ভুসি খেতে পারেন।


৩. পাইলস প্রতিরোধ করে:

ইসবগুলের ভুসি মলকে নরম রাখে ফলে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা কমে ।


৪. এনাল ফিসার থেকে মুক্তি:

এনাল ফিসার হলে পায়খানা নরম রাখার বিকল্প নেই। শক্ত পায়খানা এনাল ফিসার বাড়িয়ে দিতে পারে। আর পায়খানা নরম রাখার জন্য ইসবগুলের ভুসির অবদান অনস্বীকার্য।


৫. ওজন কমাতে সাহায্য করে:

ইসবগুলের ভুসি খেলে এটি পাকস্থলীতে গিয়ে পানি শোষণ করে ভারী হয় এবং দীর্ঘক্ষণ পেতে থাকার ফলে পেট ভরা অনুভূতি দেয় । যার ফলে খাবার কম খাওয়া হয়। আর এভাবে ইসবগুলের ভুসি ওজন কমাতে সাহায্য করে।


ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অপকারিতা:

পরিমিত পরিমাণ এবং সঠিক নিয়মে ইসবগুলের ভুসি খেলে তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব বা অপকারি দিক দেখা যায় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ফলে শরীরে কিছু বিরূপ প্রভাব দেখা যায়।

ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার অপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো:

  1. ডায়রিয়া:অধিক মাত্রায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পরে। তাই অধিক মাত্রায় ইসবগুলের ভুসি খাওয়া যাবে না।
  2. ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার ফলে ইন্টেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশনের মতো অবস্থা হতে পারে।
  3. কারো কারো ক্ষেত্রে পেটে ব্যথা , বমি বমি ভাব হতে পারে। এমনটা হলে ইসবগুলের ভুসি খাওয়া বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।


আরো পড়ুনঃ

পাইলস থেকে মুক্তি পান অপারেশন ছাড়া । পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসা

Anal Fissure: এনাল ফিসার কী।এনাল ফিসার থেকে মুক্তির উপায়

 Pneumona : নিউমোনিয়া কি?কারণ,লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধের জন্য করনীয়।

অণ্ডকোষে ব্যথার কারণ : Causes of Testicular Pain

২০২৪ সালে চুল গজানোর জন্য ৮ টি প্রাকৃতিক চুলের চিকিৎসা টিপস


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

AD

AD