উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনারা অনেকেই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার সম্পর্কে জানতে চান। তাই আজকের পোস্টে আমি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা সবাই জানি দুধ হচ্ছে উচ্চ ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। কিন্তু অনেকেরই দুধ খাওয়ার পড়ে বদহজম জাতীয় সমস্যা হয়। তাই আজকের পোস্টে আমি দুধ ছাড়া উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার নিয়ে আলোচনা করবো। তাই দুধ ছাড়া উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ন পোস্টটি ভালো করে পড়ুন।


ভূমিকা:
ক্যালসিয়াম একটি অত্যাবশ্যকীয় খনিজ যা হাড় ও দাঁতের গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি পেশী সংকোচন এবং শিথিলকরণ, স্বাভাবিক হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা, রক্ত জমাট বাঁধা এবং স্নায়ুর মধ্যে সংকেত প্রেরণে সহায়তা করে। আমরা সবাই জানি যে দুধ ক্যালসিয়ামের একটি ভাল উৎস। কিন্তু অনেকেই দুধ হজম করতে পারেন না।
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছি যাদের দুধের সমস্যা রয়েছে এবং আমরা মনে করি যে আমরা ক্যালসিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস মিস করছি।তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে দুধ ছাড়াও আমাদের চারপাশে এমন অনেক খাবার রয়েছে যা শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। আজকের পোস্টে আমরা জানবো দুধ ছাড়া উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের সম্পর্কে।

দুধ ছাড়া উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা
উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার


কাদের বেশি ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দরকার?

আমাদের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং খনিজের প্রয়োজন। এই  উপাদানগুলির মধ্যে একটি হল ক্যালসিয়াম। আমাদের শরীরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সম্পর্কে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত এবং সেই অনুযায়ী আমাদের ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ অনুসারে, সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং মহিলাদের প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া উচিত। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে, মেনোপজ যা সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পরে ঘটে এবং শরীরের হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়। ফলে হাড়ের ঘনত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
হাড়ের অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি হাড়ের বিভিন্ন ধরণের রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় অস্টিওপোরোসিস( Osteoporosis)।
তাই, হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের বেশি ক্যালসিয়াম (প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম) খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ৭০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদেরও উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম (প্রতিদিন ১২০০ মিলিগ্রাম) গ্রহণ করা উচিত।

যাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে তাদেরও বেশি করে ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে তা  আমাদের দেহে কিছু সমস্যা তৈরি করে যা দেখে আমরা ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে বুঝতে পারি: উদাহরণস্বরূপ:
মাংসপেশীর ক্র্যাম্প বা কামড়ানো, দুর্বলতা এবং ক্লান্তি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, ক্ষুধা কমে যাওয়া ইত্যাদি।


আরো পড়ুন: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা জানুন

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের তালিকা:

আমাদের আশেপাশে অনেক খাবারই আছে যেগুলো উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত। যেমন দুধ একটি উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার। আমার নিয়মিত দুধ পান করে আমাদের দেহের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে পারি। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যাদের দুধ খেলে পেটে সমস্যা হয়। তাই দুধ খেতে পারি না। যাদের এমন সমস্যা রয়েছে তারা ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য দুধ ছাড়া উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে পারেন। নিচে দুধ ছাড়া উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খবরের তালিকা হলো:


১.কাজু বাদাম
কাজুবাদাম কাঁচা বা ভাজা অবস্থায় খাওয়া যায় এবং প্রতি ১০০ গ্রামে ৩৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এতে আরো রয়েছে ২৯২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা আমাদের দৈনন্দিন চাহিদার ৮২ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করতে সক্ষম।
কাজু বাদাম থেকে চিনাবাদাম দামে সস্তা, ১০০ গ্রাম যার মধ্যে ৬৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১৮৪ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। তাই, কাজু বাদাম কিনতে আপনার সমস্যা হলে, দামের বিষয়টি মাথায় রেখে আপনি চিনাবাদাম কিনে খেতে পারেন। যাইহোক, ক্যালসিয়ামের সর্বোচ্চ পরিমাণ আমরা বাদাম থেকে পাবো, যাতে প্রতি ১০০ গ্রামে ২৬৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

২.কমলা
কমলা প্রায় আমাদের সবার প্রিয় ফল এবং এটি ভিটামিন সি-এর উৎস হিসেবে অধিক পরিচিত। তবে ভিটামিন সি এর পাশাপাশি এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। একটি বড় কমলা থেকে প্রায় ৭৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। উন্নত বিশ্বে ক্যালসিয়াম-ফোর্টিফাইড কমলার জুস পাওয়া যায় যাতে ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যালসিয়াম থাকতে পারে।


আরো পড়ুন: জিংক বি ট্যাবলেট খেলে কি মোটা হয় । জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা জানুন বিস্তারিত 


৩.মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলু একটি কম ক্যালোরি এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার। তবে এটি ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। একটি বড় মিষ্টি আলুতে প্রায় ৬৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।


৪.মটরশুটি
যদিও মটরশুটি প্রতি ১০০ গ্রাম শুধুমাত্র ২৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ধারণ করে, তবে তারা উদ্ভিদ উৎস থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর খাবারগুলির মধ্যে একটি।এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।


৫. ফুলকপি
১ কাপ ফুলকপি ৯০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে। আমাদের দেশে ফুলকপি খুব জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য তাই ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে ফুলকপি খাওয়া যেতে পারে।


৬.ব্রকলি (Brocoli)
কাপ ব্রকলিতে ৮৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। ব্রোকলি শুধুমাত্র ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে নয়, ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্যও আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে ব্রকলিতে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান যা পাকস্থলী, লিভার, কোলন, মূত্রথলি এবং স্তনের ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

৭.শালগম
শালগম মূলত একটি শীতকালীন সবজি, প্রতি ১০০ গ্রামে ১৩৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়াও এতে ভিটামিন এ, সি, কে ইত্যাদি রয়েছে। তবে কারও হজমের সমস্যা থাকলে, বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের শালগম না খাওয়াই ভালো।


৮. পালংশাক
পালংশাক আমাদের দেশে অতি পরিচিত একটি খাদ্য। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে পালংশাক ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পালংশাকে প্রায় ৯৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। তাই আপনার দেহে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে পালংশাক খেতে পারেন।


৯. ছোট মাছ(কাচকি মাছ)
যেকোনো মাছই ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ন উৎস। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। তবে আমাদের অতি পরিচিত এবং সহজলভ্য হচ্ছে ছোট মাছ বা কাচকি মাছ। এই মাছ ক্যালসিয়ামের একটি গুরুত্বপূর্ন উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোট মাছে প্রায় ৬৭৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।


১০. চিংড়ি মাছ
চিংড়ি মাছ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মাছের চাহিদা পূরণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। চিংড়ি মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৭৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।


১১. চিয়া সিড
চিয়া সিড বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। আপনারা কি জানেন যে এই চিয়া সিড ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস? প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে প্রায় ৬৩১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

আরো পড়ুন: Acne : ব্রণ দূর করার ১২ টি ঘরোয়া উপায়


১২.ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ব্রেড
বর্তমানে বাজারে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ব্রেড পাওয়া যায় যা ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস।প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ব্রেডে প্রায় ১৬৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।

আরো পড়ুন: ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারের আগে যা অবশ্যই জানতে হবে।সতর্ক থাকুন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাচুন।


বিশেষ বার্তা:

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনারা কি জানেন যে আপনাদের শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন ডি প্রয়োজন? এমনকি যদি আপনি প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান কিন্তু পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পান তাহলে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব থেকে যাবে।ভিটামিন ডি এর একটি ভালো উৎস হলো সূর্যের আলো। তাই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং সূর্যের আলোতে একটা নির্দিষ্ট সময় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ক্যালসিয়ামের মতো, ম্যাগনেসিয়াম একটি খনিজ যা শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনে জড়িত। শরীরে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ (২:১ অনুপাত)। অন্যথায়, ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি এবং অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম হার্ট এবং কিডনির বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবারের পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবারও খেতে হবে। যেমন: ব্রাউন রাইস, গম এবং গাঢ় সবুজ শাকসবজি, বাদাম (চিনাবাদাম, কাজু বাদাম ইত্যাদি) মিষ্টি কুমড়ার বীজ মটরশুটি ইত্যাদি।

শেষকথা:
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, এই পোস্ট পড়ে আপনারা দুধ ছাড়া উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার সম্পর্কে জানলেন। তবে কখনোই শুধুমাত্র ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে এমন নয়। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। আর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কখনোই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না।

Reference:





Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন

AD

AD