শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ একটি টেস্ট হল সিবিসি (Complete Blood Count) বা পূর্ণ রক্ত গণনা। এটি একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা, যা বিভিন্ন ধরনের রক্ত কোষের পরিমাণ নির্ণয় করে। বিশেষ করে লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা, প্লাটেলেট এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নির্ধারণের জন্য এই টেস্ট করা হয়। সিবিসি টেস্টের মাধ্যমে শরীরে রক্তের নানা উপাদান যেমন এনিমিয়া, সংক্রমণ, রক্তক্ষরণ বা অন্যান্য রক্ত সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। সাধারণত রোগ নির্ণয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকরা এই পরীক্ষা করিয়ে থাকেন।
এই পরীক্ষার খরচ বিভিন্ন কারণে ভিন্ন হতে পারে, যেমন চিকিৎসাকেন্দ্র, অবস্থান এবং প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।এই ব্লগটির মাধ্যমে আমরা সিবিসি টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেবো, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং খরচের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবো।
সিবিসি টেস্ট কী?
সিবিসি (CBC) বা Complete Blood Count একটি সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষা, যা রক্তের বিভিন্ন উপাদানের পরিমাণ নির্ধারণ করে। মূলত, এই পরীক্ষার মাধ্যমে তিনটি প্রধান ধরনের রক্তকণিকার পরিমাণ এবং গুণগত মান মূল্যায়ন করা হয়: লোহিত রক্তকণিকা (RBC), শ্বেত রক্তকণিকা (WBC), এবং প্লাটেলেট। এই উপাদানগুলো শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং সিবিসি টেস্টের মাধ্যমে এগুলোর কোনও অস্বাভাবিকতা বা অনিয়ম নির্ধারণ করা হয়।
১.লোহিত রক্তকণিকা (RBC): লোহিত রক্তকণিকা শরীরের কোষে অক্সিজেন পরিবহন করে এবং ফুসফুস থেকে অন্যান্য কোষে কার্বন ডাই অক্সাইড সরবরাহ করে। সিবিসি টেস্ট RBC-এর সংখ্যা, আকার এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পরীক্ষা করে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম হলে এটি এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতার ইঙ্গিত দিতে পারে।
২.শ্বেত রক্তকণিকা (WBC): শ্বেত রক্তকণিকা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি বিভিন্ন ধরণের ইনফেকশন এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সিবিসি টেস্টে WBC-এর সংখ্যা বৃদ্ধি বা হ্রাসের মাধ্যমে ইনফেকশন বা অন্যান্য রোগের প্রাথমিক লক্ষণ নির্ধারণ করা যায়।
৩.প্লাটিলেট: প্লাটিলেট রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে, যা কোনও ক্ষত বা আঘাতের পর রক্তপাত বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্লাটিলেট পরিমাণ কম থাকলে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
চিকিৎসকরা বিভিন্ন কারণে সিবিসি টেস্টের পরামর্শ দেন, যেমন শারীরিক দুর্বলতা, দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, ক্লান্তি, অস্বাভাবিক রক্তপাত বা ইনফেকশনের উপসর্গ। এছাড়া যেকোনো চিকিৎসা শুরুর আগে বা চলাকালীন শরীরের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্যও এই টেস্ট প্রয়োজন হতে পারে।
সিবিসি টেস্ট কেন করা হয়?
সিবিসি (Complete Blood Count) বা পূর্ণ রক্ত গণনা একটি প্রাথমিক রক্ত পরীক্ষা, যা শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য মূল্যায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রধানত লোহিত রক্তকণিকা (RBC), শ্বেত রক্তকণিকা (WBC), এবং প্লাটেলেটের সংখ্যা ও কার্যক্ষমতা নির্ধারণ করে। চিকিৎসকরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ অনুসন্ধানের জন্য এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্য সিবিসি টেস্টের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
১.শরীরের সামগ্রিক অবস্থা মূল্যায়ন : রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়ার জন্য সিবিসি টেস্ট করা হয়। এটি শরীরের রক্ত সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা যেমন রক্তশূন্যতা, ইনফেকশন বা অন্য রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে জানাতে সহায়ক হয়।
২.রক্তশূন্যতা(এনিমিয়া) নির্ণয়:লোহিত রক্তকণিকা (RBC) এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই অবস্থায় শরীরের বিভিন্ন কোষে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না, যার ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সিবিসি টেস্টের মাধ্যমে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা মূল্যায়ন করে রক্তশূন্যতা শনাক্ত করা যায়।
৩.সংক্রমণ(ইনফেকশন) নির্ণয়: শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি হলে এটি সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। WBC শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে এবং যেকোনো ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সিবিসি টেস্টের মাধ্যমে WBC-এর মাত্রা নির্ণয় করে সংক্রমণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
4.রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা: প্লাটেলেট রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়ক হয়। যেকোনো আঘাত বা কেটে যাওয়ার পর রক্তপাত বন্ধ করার জন্য প্লাটেলেটের সঠিক মাত্রা প্রয়োজন। সিবিসি টেস্টের মাধ্যমে প্লাটেলেটের সংখ্যা নির্ধারণ করে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি আছে কি না তা বোঝা যায়।
৫.অস্থি মজ্জার(Bone Marrow)সমস্যা: সিবিসি টেস্ট অস্থি মজ্জার কার্যক্ষমতা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে সহায়ক। অস্থি মজ্জা রক্তকণিকা উৎপাদন করে, এবং সিবিসি টেস্টের মাধ্যমে দেখা যায় যে অস্থি মজ্জা সঠিকভাবে কাজ করছে কি না।
৬. লিউকেমিয়া ও অন্যান্য রক্ত সংক্রান্ত ক্যান্সার শনাক্তকরণ: লিউকেমিয়া এবং অন্যান্য রক্ত সংক্রান্ত ক্যান্সারগুলোতে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। সিবিসি টেস্টের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোর প্রাথমিক ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
৭.চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ: বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা চলাকালীন যেমন কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির সময় রক্তের পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পেতে সিবিসি টেস্ট ব্যবহার করা হয়। এতে চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায় এবং চিকিৎসার উপযোগিতা মূল্যায়ন করা যায়।
আরো পড়ুন: ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহারের আগে যা অবশ্যই জানতে হবে।সতর্ক থাকুন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে বাচুন।
সিবিসি টেস্ট সম্পর্কে আরো জানতে এই ভিডিও টি দেখুন:
সিবিসি টেস্ট খরচ কত বাংলাদেশে? - CBC Test Price in Bangladesh
বাংলাদেশে সিবিসি (Complete Blood Count) টেস্টের খরচ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত, সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই টেস্টের খরচ কম হয়, কারণ সেখানে সরকার কর্তৃক সাবসিডি দেওয়া হয়। অন্যদিকে, বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালগুলোতে তুলনামূলকভাবে খরচ বেশি হয়ে থাকে।
সরকারি হাসপাতালে সিবিসি টেস্টের খরচ:
সরকারি হাসপাতালে সাধারণত সিবিসি টেস্টের খরচ অনেক কম, প্রায় ১৫০-২০০ টাকা। সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে রক্ত পরীক্ষার খরচ কম রাখা হয়, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে।
বেসরকারি হাসপাতালে সিবিসি টেস্টের খরচ:
বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিবিসি টেস্টের খরচ সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিছু নামকরা হাসপাতাল বা উচ্চমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এটি আরও বেশি হতে পারে, কারণ সেখানে আধুনিক সরঞ্জাম ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
অবস্থান, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মান এবং সুবিধার ভিত্তিতে খরচের তারতম্য হতে পারে।
Further Reading:
Complete blood count (CBC)
https://www.mayoclinic.org/tests-procedures/complete-blood-count/about/pac-20384919#:~:text=A%20complete%20blood%20count%20(CBC,blood%20cells%2C%20which%20fight%20infection
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন